লোহাগড়ায় বিএনপির ভাবমূর্তি সংকটে: বিতর্কিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বিডি সময় নিউজ ২৪ বিডি সময় নিউজ ২৪ প্রকাশিত: ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ৮, ২০২৫ লোহাগড়ায় বিএনপির ভাবমূর্তি সংকটে: বিতর্কিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রাশেদ রাসু, লোহাগড়া, নড়াইল থেকে : সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠে আসছে। বিশেষ করে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় বিএনপির ভাবমূর্তি বর্তমানে চরম সংকটে পড়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সালিশ বাণিজ্য, দখল ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দলটির স্থানীয় পর্যায়ের কিছু কথিত নেতাকর্মী অতীতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠনে সক্রিয় ছিলেন। বর্তমানে তারা বিএনপির নাম ব্যবহার করে ব্যক্তি স্বার্থে দল পরিচালনা করছেন। এতে করে আদর্শিক রাজনীতি থেকে দল ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তৃণমূলের প্রকৃত ও আদর্শবান কর্মীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পুরোনো ছাত্রলীগ, নতুন বিএনপি— দলীয় আদর্শে আঘাত লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক বিতর্কিত ব্যক্তি বিএনপির ব্যানারে সালিশ বাণিজ্য, থানায় প্রভাব খাটানো, মাদক সংশ্লিষ্টতা ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। এদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বিএনপির ক্ষমতায় না থাকলেও তারা এখন কার্যত ‘সরকারি দলের মতো’ আচরণ করছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি অবজ্ঞারই নামান্তর। এক ইউনিয়ন পর্যায়ের এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন: > “আমরা আদর্শে দল করি, কিন্তু এখন অনেকেই টাকা আর প্রভাবের জন্য বিএনপি করছে। তারা শুধু নিজেদের ফায়দা লুটছে, দলের কোনো ভবিষ্যৎ ভাবছে না।” তারেক রহমানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি লোহাগড়ায় দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা রূপরেখা মাঠপর্যায়ে কার্যত অকার্যকর হয়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোহাগড়ায় দলীয় আদর্শ ও নীতিনৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে চলছে ব্যক্তি স্বার্থে দল চালানোর প্রবণতা। এক প্রবীণ নেতা বলেন: > “তারেক রহমান আদর্শিক আন্দোলনের কথা বলছেন, কিন্তু এখানে যারা নেতা সেজে বসে আছেন তারা এসব নির্দেশনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং দলকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো চালাচ্ছে।” দলীয় কোন্দল ও বিভাজন— নেতারা মুখোমুখি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিতে কোন্দল, পারস্পরিক দোষারোপ এবং নেতৃত্বে বিভাজন প্রকট আকার ধারণ করেছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। ফলে দলীয় ঐক্য ভেঙে পড়ছে এবং মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। স্থানীয় এক নেতা বলেন, > “লোহাগড়ায় এখন বিএনপি আছে কাগজে-কলমে, বাস্তবে নেই। দলটা এক এক জন এক একভাবে চালাচ্ছে।” দেশজুড়ে অনিয়ম, লোহাগড়া তার ব্যতিক্রম নয় এ সমস্যা শুধু লোহাগড়া নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকে মনে করছে বিএনপি হয়তো ক্ষমতায় ফিরবে। এই ধারণায় বহু বছর নিষ্ক্রিয় থাকা কিছু নেতা আবার মাঠে নেমে পড়েছেন, কেউ কেউ দলের পরিচয়ে জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধে। লালমনিরহাটে থানায় হামলা, খুলনায় পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর, ভোলায় ধর্ষণের অভিযোগের মতো ঘটনা এসব প্রমাণ করছে— বিএনপির একটি অংশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। জনগণের মুখে নেতিবাচক প্রতিচ্ছবি স্থানীয় জনগণের ভাষ্য অনুযায়ী, রাজনীতির সঙ্গে জনসেবার সম্পর্ক অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। এখন যারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়, তারা নিজের সুবিধা আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত। একজন বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী বলেন, > “আগে নেতারা মানুষের পাশে থাকত, এখন নিজেদের পকেট ভরাতেই ব্যস্ত।” কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ ও শুদ্ধি অভিযান জরুরি বিএনপির আদর্শিক রাজনীতির ধারায় ফিরতে হলে লোহাগড়াসহ দেশজুড়ে তৃণমূল পর্যায়ের বিতর্কিত নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক শুদ্ধি অভিযান চালানোর দাবি উঠেছে। নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা না নিলে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা আরও হারাবে এবং আন্দোলনের ধারা ব্যাহত হবে। একাধিক তৃণমূল নেতার অভিমত: > “দলকে বাঁচাতে হলে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো সংগঠনের যে ঐতিহ্য, তা ধ্বংস হয়ে যাবে।” SHARES রাজনীতি বিষয়: