হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান জন্ম, চিকিৎসা না পেয়ে নবজাতকের মৃত্যু!

প্রকাশিত: ১:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৫

হাসপাতালের বারান্দায় সন্তান জন্ম, চিকিৎসা না পেয়ে নবজাতকের মৃত্যু!

বিডি সময় ডেস্ক রিপোর্ট:

সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের বারান্দায় সন্তান প্রসব করেছেন দুই নারী। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে গিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতে না পারায় বারান্দাতেই সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হন তারা। দুঃখজনকভাবে, এই ঘটনায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২ জুলাই) বিকেলে। ভুক্তভোগী দুই নারী হচ্ছেন—সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর গ্রামের সাহিন মিয়ার স্ত্রী সুমি বেগম (১৯) ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রামপাশা গ্রামের রতন চন্দ্র দাসের স্ত্রী সুপ্রিতা রানী দাস (২৫)।

পরিবারের অভিযোগ, দুপুর ২টার দিকে সুমি বেগম ও সুপ্রিতা রানীকে ওসমানী হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। তবে বেড না থাকায় ও কর্তব্যরত নার্সদের ‘অবহেলার কারণে’ তাদের বাইরে বারান্দায় অপেক্ষা করতে বলা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে প্রসববেদনা শুরু হলে বারবার ডাক্তার ও নার্সদের জানানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

অবশেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বারান্দার চেয়ারে বসা অবস্থায় সুমি বেগম সন্তান প্রসব করেন। মাত্র ১০ মিনিট পর একইভাবে সুপ্রিতা রানীও প্রসব করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন না কোনো চিকিৎসক বা নার্স। অন্যান্য রোগীর স্বজনরা নিজেদের কাপড় দিয়ে প্রসব কার্য সম্পন্নে সহায়তা করেন।

পরে একজন নারী চিকিৎসক এসে তাদের ভেতরে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে সুমি বেগমের নবজাতকের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে। ঘণ্টাখানেক পর মারা যায় শিশুটি।

এই ঘটনায় হাসপাতালে উপস্থিত স্থানীয় দুই সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সুমি বেগম বলেন, “দুপুর ২টায় এসেছি, আমাকে বসিয়ে রাখে। বারান্দায় বাচ্চা হওয়ার পর ডাক্তার আসে। তখনও অনেক দেরি হয়ে গেছে।”

তার বাবা আজাদ মিয়া ঘটনাটির বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে সুমি বেগম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালে বেড সংখ্যা মাত্র ৫০০। কিন্তু বুধবার রোগীর সংখ্যা ছিল ২৯০০। এই ধরনের চাপ প্রায়ই থাকে। প্রসবকালীন রোগী বেশি হলে পর্যায়ক্রমে ডেলিভারি করতে হয়। তাই দেরি হয়।”

তিনি আরও বলেন, “রোগীর স্বজনরা হয়তো যথাযথভাবে ডাক্তারদের জানাতে পারেননি। তবে ঘটনা ঘটার পরপরই তাদের ভেতরে নেওয়া হয়।”

স্থানীয় জনসাধারণ ও সামাজিক সংগঠনগুলো হাসপাতালের দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে।