ঘোড়ার শোকে ভেঙে পড়ে না ফেরার দেশে গোরখোদক মনু মিয়া

প্রকাশিত: ১:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২৫

ঘোড়ার শোকে ভেঙে পড়ে না ফেরার দেশে গোরখোদক মনু মিয়া

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি | 

‘শেষ ঠিকানার কারিগর’ নামে পরিচিত কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার আলগাপাড়া গ্রামের নিঃস্বার্থ কবর খননকারী মো. মনু মিয়া (৬৭) আর নেই। শনিবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মনু মিয়া ছিলেন কেবল একজন গোরখোদক নন, ছিলেন মানবিকতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। জীবনের প্রায় পাঁচ দশক তিনি ব্যয় করেছেন মৃতদের জন্য কবর খুঁড়ে। বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক কখনো নেননি। স্বজনহারা মানুষের কান্না আর শেষ বিদায়ের আচারগুলোতে তিনি নিঃশব্দে থেকেছেন পাশে।

জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, “মনু মিয়ার মতো নিঃস্বার্থ মানুষ আমরা আর পাব না। তিনি শুধু কবর খুঁড়তেন না, মানুষের কষ্ট ভাগ করে নিতেন।”

তিন হাজার মানুষের শেষ বিদায়ের সাথী

প্রায় ৪৯ বছর ধরে নিজ এলাকা ও আশপাশের গ্রামে তিন হাজারের বেশি মানুষের কবর খুঁড়েছেন মনু মিয়া। নিজ উদ্যোগে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন—এই কাজ দ্রুত পৌঁছানোর জন্য। সেই ঘোড়াটি ছিল তার পরম সঙ্গী। গ্রামের মানুষ তাকে চিনত ঘোড়ার পিঠে ছুটে চলা এক সাদা পাঞ্জাবি পরা পরোপকারী মানুষ হিসেবে।

ঘোড়ার মৃত্যু, তারপর মনু মিয়ার ভাঙন

কিছুদিন আগে দুর্বৃত্তদের হাতে প্রিয় ঘোড়াটি নিহত হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মনু মিয়া। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। ঢাকার আইনজীবী এবং তার এলাকার সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, “আমি হাসপাতালে গিয়ে বলেছিলাম—অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চান। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে কাজ করি, মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।”

চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও আর সুস্থ হতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, ঘোড়ার মৃত্যুই তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে দেয়।

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন

মনু মিয়ার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অনেকেই বলছেন, তিনি ছিলেন শুধু গোরখোদক নয়, ছিলেন এক নিঃস্বার্থ মহৎ মানুষ, মানবিকতার জীবন্ত দৃষ্টান্ত। মৃত্যুর পরও বহু মানুষের দোয়া ও শ্রদ্ধায় তিনি বেঁচে থাকবেন।