❝নিষিদ্ধ জালের দৌরাত্ম্যে বিলুপ্তির পথে নড়াইলের দেশীয় মাছ❞
রাশেদ রাসু, নড়াইল থেকে :
"মাছে-ভাতে বাঙালি"—বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি আজ যেন শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাছের ভাণ্ডারখ্যাত নড়াইল জেলার নদী-নালা, খাল-বিল থেকে একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।
নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, ভেসাল, সুতিজাল, বেহুন্দী জালসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর জালের অবাধ ব্যবহারে হুমকির মুখে পড়েছে মাছের প্রজনন প্রক্রিয়া। বর্ষা মৌসুমে যখন দেশীয় মাছগুলো ডিম ছাড়ে, তখনই অসাধু শিকারিদের দৌরাত্ম্য প্রকট হয়ে ওঠে। তারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নির্বিচারে শিকার করছে ডিমওয়ালা মাছ, পোনা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, একসময় যেসব জলাশয়ে শোল, গজার, বোয়াল, টেংরা, খলসে, রুই, কাতল, পাবদা, আইড়, রিটা, বাইম, বেলে, রঙিন বেতাগা, বাঁশপাতা, কালিবাউসসহ প্রায় অর্ধশত দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত—আজ সেগুলোর অনেক প্রজাতিই দেখা যায় না বললেই চলে। বিশেষ করে রিটা, আইড়, বেতাগা ও পাবদার মতো মাছ আজ বিলুপ্তির পথে।
এছাড়াও, সেচ দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা এবং প্রভাবশালীদের মাধ্যমে সরকারি খাল দখলের অভিযোগও রয়েছে। এতে শুধু মাছ নয়, ধ্বংস হচ্ছে জলজ প্রতিবেশ—সাপ, ব্যাঙ, শামুকসহ বহু প্রজাতির প্রাণীও পড়ছে বিপদের মুখে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান জানান,
> “জেলার তিনটি উপজেলাতেই সরকারিভাবে নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় ২০০ মৎস্যজীবীকে গরু দিয়ে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং কিছু এলাকায় বৃষ্টি মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে।”
তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে,
> “সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অভিযান ও উদ্যোগের অনেক কিছুই কাগজে-কলমে থাকলেও মাঠে কার্যকর কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন নেই। বরং দিনের পর দিন ডিমওয়ালা মাছ ধরা, পোনা নিধন ও নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার চোখের সামনে ঘটছে—কোনো প্রতিকার ছাড়াই।
সচেতন মহলের মত, দেশীয় মাছ রক্ষায় শুধু অভিযান নয়—প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, নিয়মিত পরিবেশ সচেতনতা কার্যক্রম এবং বিকল্প জীবিকার বাস্তবায়ন। নাহলে "মাছে-ভাতে বাঙালি" প্রবাদটি আগামী প্রজন্মের জন্য শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে।