সোহাগ হত্যাকাণ্ড: সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে চলছে তীব্র প্রতিবাদ। ৯ জুলাই সন্ধ্যায় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শত শত মানুষের সামনে এক নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ইট, রড ও ব্লক দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার এক মুসলিম নাগরিকের হত্যাকাণ্ড হিসেবে বাংলাদেশে পরিচিত হলেও ভারতের কিছু গণমাধ্যম একে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে।
বিশেষ করে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে তাদের প্রতিবেদনে সোহাগকে ‘হিন্দু ব্যবসায়ী’ উল্লেখ করে ঘটনাটিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে। এমনকি তারা প্রতিবেদনটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী এক বিক্ষোভের পুরোনো ছবি ব্যবহার করে, যা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে অসংশ্লিষ্ট।
এ ছাড়া WION, নামস্তে তেলেঙ্গানা, হিন্দুস্তান টাইমস এবং টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়াসহ কয়েকটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। যদিও কোথাও সরাসরি ধর্মীয় পরিচয় টানা না হলেও, প্রতিবেদনে সোহাগ হত্যার সঙ্গে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ এবং হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পরিসংখ্যান জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
বাস্তবতা কী বলছে?
নিহত লাল চাঁদ সোহাগ একজন মুসলিম ব্যবসায়ী। পুলিশের ভাষ্য মতে, এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক সহিংসতা, যেখানে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ১৯ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএনপি ইতোমধ্যেই অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে বহিষ্কার করেছে। বিশ্লেষকরা এটিকে একটি রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত বিরোধের পরিণতি বলেই মনে করছেন।
বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের বিশ্লেষক ও নাগরিক সমাজ মনে করছেন, ভারতের কিছু গণমাধ্যমের এই ধরনের তথ্যবিকৃতি দুই দেশের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা বাড়াতে পারে। একে ‘দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
তারা বলছেন, “একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা শুধু অনৈতিক নয়, এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
চাওয়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো যেন যথাযথ তথ্য যাচাই করে সংবাদ পরিবেশন করে এবং এমন অপপ্রচারে নিরুৎসাহিত হয়। একইসঙ্গে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক রক্ষায় সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।