সারাদেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ‘মব সন্ত্রাস’, বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি বিডি সময় নিউজ ২৪ বিডি সময় নিউজ ২৪ প্রকাশিত: ১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৫ সারাদেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ‘মব সন্ত্রাস’, বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে ‘মব সন্ত্রাস’ বা গণপিটুনির ঘটনা। সামাজিক বিচারপ্রথা ভেঙে পড়ে এক শ্রেণির মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, আর এর সুযোগ নিচ্ছে সুবিধাভোগী অপরাধীরা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, চাঁদাবাজি, দখল এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ‘মব ফাঁদ’ তৈরি করে পরিকল্পিত সহিংসতায় মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। গত ছয় দিনে কুমিল্লা, গাজীপুর, ঢাকা ও সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬ জন মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীসহ তার সন্তানদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা, গাজীপুরে যুবক হৃদয়, ঢাকায় আল আমিন ও সিরাজগঞ্জে এক মানসিক প্রতিবন্ধীর মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ২৫৩টি মব সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬৩ জন, আহত হয়েছেন ৩১২ জন। শুধু গত জুনেই ৪১টি ঘটনায় মারা গেছেন ১০ জন, গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৪৭ জন। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অপরাধ বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, মব সন্ত্রাস এখন আর তাৎক্ষণিক উত্তেজনার ফল নয়, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পরিকল্পিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ. বি. এম নাজমুস সাকিব বলেন, “এই প্রবণতা বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাব ও নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে, কিন্তু একাধিক গোষ্ঠী আইন প্রয়োগের নামে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এর ফলে সমাজে এক ধরনের ‘রিভেঞ্জ থিওরি’ ফিরে আসছে, যা অত্যন্ত ভয়ানক ইঙ্গিত বহন করে।” সামরিক ও অপরাধ বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তফা কামাল বলেন, “মব ভায়োলেন্স দেশের জন্য বড় সামাজিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মোকাবেলায় দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।” পুলিশ ও প্রশাসনের অবস্থান আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, “মব তৈরি করে অপরাধ সংঘটিত করা হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে ছাড় দেওয়া হবে না।” ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেছেন, “মব সন্ত্রাস ঠেকাতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিক্রিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “মব সন্ত্রাস কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। অপরাধের বিচার আদালতে হবে, রাস্তায় নয়। এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা সরকারের ব্যর্থতা।” মানবাধিকার সংগঠক নূর খান লিটন বলেন, “এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি মবসন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাজ, যারা পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা ছড়াচ্ছে। সরকার এ দায় এড়াতে পারে না।” উপসংহার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা একমত যে, দেশে বিচারব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, এবং গণসচেতনতা বাড়াতে হবে। একইসাথে, মব সন্ত্রাসে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই সামাজিক ব্যাধি বন্ধ করা সম্ভব নয়। SHARES অপরাধ বিষয়: