লোহাগড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা খোকন চৌধুরীর লোকজনের নির্যাতনে পুরুষশূন্য উলা গ্রাম
রাশেদ রাসু, লোহাগড়া থেকে :
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের উলা গ্রাম যেন এক অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। আধিপত্য বিস্তার আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের নেশায় এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা খোকন চৌধুরী ও তাঁর অনুসারীদের দমন-পীড়নে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
গত ১১ জুলাই রাতে অহিদ মেম্বার সমর্থকদের উপর অতর্কিত হামলার পর থেকেই গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। আতঙ্কে গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ঘরে রয়েছে শুধু নারী, শিশু ও বৃদ্ধ—যাঁরা দিন কাটাচ্ছেন অজানা আশঙ্কা আর আতঙ্কের সঙ্গে।
স্থানীয় এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
> “রাত-দিন একটা ভয়ে থাকি। কখন কে এসে দরজা ভেঙে ফেলবে, আর কী করবে কিছুই বুঝি না। খোকন চৌধুরীর লোকজন যেভাবে অত্যাচার করছে, এমন অবস্থায় মানুষ থাকতে পারে?”
আরও অভিযোগ উঠেছে, খোকন চৌধুরীর লোকজন দিনের পর দিন অহিদ মেম্বারপন্থী পরিবারগুলোর উপর হামলা, মামলা এবং শারীরিক নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। এমনকি স্থানীয় এক নারীর অভিযোগ—
> “ওই হাকিমের বউকে খোকন চৌধুরী খারাপ প্রস্তাব দেয়। রাজি না হওয়ায় তার বাড়িতেও হামলা হয়েছে।”
এলাকাবাসীর দাবি, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে খোকন চৌধুরী তাঁর বাহিনী দিয়ে এলাকাজুড়ে এক আতঙ্কের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে তিনি বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরও ব্যবহার করছেন।
নারী-শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা চরমে
গ্রামের একাধিক নারী জানান, তারা এখন বাড়ির ভেতরেও নিরাপদ নন। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বৃদ্ধ বাবা-মা ও শিশুদের নিয়েই কোনো মতে বেঁচে আছেন তারা।
> “নেতা হইলে কি মানুষ মারলে হয়? সরকার কি এইসব দ্যাখে না?” — ক্ষোভ প্রকাশ করেন এক নির্যাতিত নারী।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম জানান,
> “গত ১১ জুলাই রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এর জেরে এলাকা উত্তপ্ত হয়েছে। একটি মামলা হয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোকন চৌধুরীর বলেন,
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমি ও আমার লোকজন গ্রামে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছি তারপরেও প্রতিপক্ষের লোকজন মন গড়া কাল্পনিক বানোয়াট সর্বোপরি মিথ্যা তথ্য ও অপবাদ দিয়ে আমার এবং আমার লোকজনের মান সম্মান ক্ষুন্ন করছে আমি কোনদিনই গ্রামের সংঘাত সংঘর্ষে জড়িত নই। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা জনৈক নারীর কু প্রস্তাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
শান্তি ও নিরাপত্তার দাবি
উলা গ্রামের নারীরা একযোগে সরকারের কাছে শান্তি ও নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বলেন,
> “আমরা আর কিছু চাই না। শুধু চাই শান্তিতে ঘরে থাকতে, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। খোকন চৌধুরীর বিচার চাই।”