মুরাদনগরে নির্যাতনের শিকার নারীর আকুতি: “দুটি সন্তান নিয়ে শুধু বাঁচতে চাই”
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা, মুরাদনগর:
“আমার মান-সম্মান সব গেছে। আমি শুধু আমার দুইটা সন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই।” — এমন করুণ আকুতি জানিয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নির্যাতনের শিকার এক নারী। ওই নারীর ওপর বর্বরতা এবং সেই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা
গত বৃহস্পতিবার রাতে মুরাদনগরের নিজ বাড়িতে ওই নারী ধর্ষণের শিকার হন। অভিযোগ অনুযায়ী, ফজর আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি ছুরি ধরে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার সময় ও পরে আরও কয়েকজন ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করেন এবং পরে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
পরবর্তীতে, ওই নারী ফজর আলীকে প্রধান আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এছাড়া ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ও তদন্ত
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফজর আলী ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে এবং বাকিরা মুরাদনগর এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার হন। ভিডিও ছড়ানো অভিযুক্তদের মোবাইলে নির্যাতনের ভিডিওও উদ্ধার করা হয়েছে।
নারীর আকুতি ও পরিবারে আতঙ্ক
ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের বলেন, “আমাকে কেউ মামলা তুলে নিতে বলেনি। আমি দেশের শান্তি চাই। সবাই শান্তিতে থাকুক। হিন্দু-মুসলমান সবাই যেন ভালো থাকে।”
তার বাবা জানান, “আমার মেয়ের জীবন শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আর কারো বিরুদ্ধে যেতে পারি না। ওরা শক্তিশালী।”
রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও বিতর্ক
ঘটনার পর অভিযুক্ত ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ায়। কেউ বলেন তিনি আওয়ামী লীগের, আবার কেউ বলছেন বিএনপির ঘনিষ্ঠ। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অপরাধমূলক ঘটনায় রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়, বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই প্রাধান্য পাচ্ছে।
প্রতিবাদ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা
ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
হাইকোর্ট ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান জানিয়েছেন, “প্রধান অভিযুক্তসহ জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তদন্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম কামরুজ্জামান বলেন, “মেয়েটি ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। যারা ভিডিও ছড়িয়েছে, তাদের মোবাইলে প্রমাণ মিলেছে। আরও অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”