মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সুফিয়া ১৫ বছর ধরে ঝাড়ুদার, এখনও বেতন মাত্র ১৫০০ টাকা!

প্রকাশিত: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৫

মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সুফিয়া ১৫ বছর ধরে ঝাড়ুদার, এখনও বেতন মাত্র ১৫০০ টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক কুষ্টিয়া :

১৫ বছর ধরে কুষ্টিয়ার মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও অডিটোরিয়ামে ঝাড়ুদারের চাকরি করছেন সুফিয়া খাতুন। কিন্তু এতদিনেও তার মাসিক বেতন বাড়েনি—আটকে আছে মাত্র ১৫০০ টাকায়। এই টাকায় ৭ সদস্যের পরিবার নিয়ে সংসার চালানো দূরের কথা, নিত্যদিনের আহার জোগাড় করাও দুরূহ হয়ে উঠেছে তার জন্য।

চোখে পানি এনে সুফিয়া বলেন,
‘১৫ বছর আগে ১৫০০ টাকা বেতন দিছিল, আজও সেই টাকাই পাই। এই টাকায় কিছুই চলে না। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকি। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসাও করাতে পারি না।’

সুফিয়া খাতুন কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। ছেলেটি ছিলেন ভ্যানচালক, কিন্তু বর্তমানে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রায় ১০ লাখ টাকা, অথচ ওষুধ কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই।

তিনি বলেন,
‘ডাক্তার বলছে ১০ লাখ টাকা লাগবে। ওষুধ কিনতেই মাসে ৩ হাজার টাকা লাগে। আমি সরকারের কাছে সাহায্য চাই। আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে চাই, আমার নাতিপুতিদের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে চাই।’

বাড়তি কষ্টের কথা জানিয়ে সুফিয়া আরও বলেন,
‘কত জায়গায় কাগজপত্র নিয়ে ঘুরি, কেউ কথা শোনে না। বেতন বাড়ানোর জন্য কতজন স্যারের কাছে গেছি, কেউ কিছু করেনি।’

প্রতিবেশীরা জানায়, সুফিয়ার পরিবার চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। একমাত্র ছেলেও এখন অক্ষম। তারা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছেন।

এ ব্যাপারে পাঠাগারের কেয়ারটেকার সৈয়দা আশেকুন নাহার বলেন,
‘তিনি অনেকদিন ধরে এখানে কাজ করছেন। তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আমরা চাই, সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসুক।’

এদিকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্রী। তিনি বলেন,
‘সুফিয়া খাতুনের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আগামী মাস থেকেই তার বেতন বাড়ানো হবে।’

এই প্রতিবেদনটি সমাজের বিত্তবান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রতি একটি আহ্বান—মানবিক কারণে সুফিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। কারণ, একটি পরিবারের জীবনের প্রশ্ন এখানে জড়িয়ে আছে।