দিঘলিয়ায় সাবেক ছাত্রনেতা মুরাদ হোসেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বিডি সময় নিউজ ২৪ বিডি সময় নিউজ ২৪ প্রকাশিত: ১:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২৫ দিঘলিয়ায় সাবেক ছাত্রনেতা মুরাদ হোসেন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন স্ত্রী-সন্তানদের অবহেলায় প্রবাসজীবন শেষে নিঃস্ব ও অসহায়, শেষ বয়সে সমাজের সহানুভূতির প্রত্যাশায় নিজস্ব প্রতিবেদক খুলনা: এক সময়ের সাহসী ও জনপ্রিয় ছাত্রনেতা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের খুলনার দিঘলিয়া শাখার পরিচিত মুখ আ.ন.ম. মুরাদ হোসেন আজ চরম অবহেলা ও নিঃসঙ্গতায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। দীর্ঘ ২০ বছরের প্রবাসজীবন শেষে দেশে ফিরে পরিবারের ভালোবাসা তো দূরের কথা, পেয়েছেন নির্যাতন, প্রতারণা এবং বঞ্চনা। আজ তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে এক বিছানায় পড়ে থাকা মানুষ—নয়নের জলের ভাষায় বলছেন, “আমি কি এই প্রতিদান পাওয়ার জন্যই জীবনটা দিলাম?” ১৯৯০-এর দশকে মুরাদ হোসেন ছিলেন ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা। ১৯৯৮ সালে জেলা ছাত্রদল সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চলের হত্যাকাণ্ডের পর রাজনীতির ঝড়ো পরিবেশ এবং মায়ের অনুরোধে তিনি ছোট ভাইয়ের সহায়তায় সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি নিয়ে পরিশ্রম শুরু করেন। ভুল সিদ্ধান্ত ছিল—মন থেকে খালাতো বোন মাহফুজা সুলতানাকে বিয়ে করা। প্রবাসজীবনের কষ্টার্জিত অর্থ স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে খুলনা ও ঢাকায় বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে দেশে ফিরে যখন স্ত্রীকে শেষবারের মতো ১৭ লাখ টাকার সার্ভিস বেনিফিট তুলে দেন, সেখান থেকেই শুরু হয় অবহেলার পর্ব। মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি সন্তানদের দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার বেদনা চেপে বসে তাঁর হৃদয়ে। অবশেষে ২০২১ সালে নিজ গ্রাম ফরমাইসখানায় ফিরে যান। রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলেও সামাজিক অবজ্ঞা আর রাজনৈতিক হয়রানি পিছু ছাড়েনি। পুরনো এক মামলায় ফেসবুক পোস্টের জেরে জেলেও যেতে হয়। শেষ কয়েক বছরে চারবার ব্রেন স্ট্রোকের শিকার হয়ে বর্তমানে প্রায় সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন তিনি। হারিয়েছেন চলাফেরার ক্ষমতা, কথা বলার শক্তি এবং প্রায় পুরোপুরি স্মৃতিশক্তি। অটো পায়খানা-প্রস্রাব, দুর্বলতা ও অনুভূতিহীনতার কারণে কেউ স্থায়ীভাবে সেবাও দিতে চায় না। তার ছোট ভাই জাহিদ হাসান মিল্টনের কথায়— “ভাই এখন কেবল শরীরটা বাঁচিয়ে আছেন। স্ত্রী-সন্তানরা নিজের মতো সুখে থাকলেও তিনি মৃত্যুর আগে একটু মানুষের মতো বাঁচার সুযোগও পাচ্ছেন না। চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু সামর্থ্য নেই।” প্রশ্ন উঠছে—একজন নিবেদিত ছাত্রনেতা, যিনি সংগঠনের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁর পরিণতি যদি হয় এমন অবহেলা ও অপমান, তবে ভবিষ্যতের তরুণরা কীভাবে রাজনীতিকে আশ্রয় হিসেবে ভাববে? স্থানীয় সচেতন মহল ও রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, দল বা সমাজ যদি উদ্যোগ নেয়, তবে এখনও হয়তো কিছুটা মানসম্মত জীবন ফিরে পেতে পারেন মুরাদ হোসেন। অবহেলা নয়, এই শেষ সময়ে একজন রাজপথ কাঁপানো নেতার জন্য প্রাপ্য হোক সম্মান আর সহানুভূতি। SHARES বিশেষ প্রতিবেদন বিষয়: