দারিদ্র্য জয় করে জিপিএ-৫, কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত প্রমা রাণীর
রাশেদ রাসু :
টিনের চালা দেওয়া একটি ঘর। বাবা দিনমজুর, মা কাথা সেলাই আর পুঁতির ব্যাগ তৈরি করে সংসার চালান। যেখানে প্রতিদিন তিন বেলা খাবার জোটাতে কষ্ট, সেখানে শিক্ষার খরচ যেন বিলাসিতার নামান্তর। তবুও থেমে থাকেনি নবীনগরের অদম্য মেয়ে প্রমা রাণী দাস।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের ভুলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমা এসএসসি পরীক্ষায় পেয়েছে জিপিএ-৫। কোনো কোচিং বা প্রাইভেট শিক্ষক ছাড়াই সে এই অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে একমাত্র নিজের চেষ্টায়।
প্রমার বাবা শিবলু কর্মকার বলেন, “পেটে ভাত না থাকলেও বই ছাড়া থাকতে পারত না প্রমা। ধার-দেনা করে হলেও ওর পড়াশোনা চালিয়ে গেছি, কিন্তু কলেজে ভর্তি, বই আর যাতায়াত খরচ—সব মিলে এখন আর সামলাতে পারছি না।”
প্রমা নিজেও হাল ছাড়তে চায় না। সে জানায়, “আমি ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু জানি না সেই স্বপ্ন কখন ভেঙে যাবে। ৯ম শ্রেণি থেকে টিউশন করে নিজের পড়ার খরচ চালিয়েছি। এখন বাবার পক্ষে আর সম্ভব না। অনেক কিছু দরকার কলেজে ভর্তি হতে।”
প্রমাদের পরিবারের পাঁচ সদস্যের সংসার একটি ঘরেই। এমন বাস্তবতায় স্বপ্ন দেখা যেন অনেক বড় সাহসের ব্যাপার। তবুও প্রমার চোখে এখনো আলো জ্বলে।
ভুলাচং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জনা রাণী সাহা বলেন, “প্রমার সাফল্য আমাদের গর্ব। এমন প্রতিকূলতায় থেকেও সে জিপিএ-৫ পেয়েছে, এটা বিরল। আমি বিদ্যালয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলব যেন তাকে সহযোগিতা করা যায়। ব্যক্তিগতভাবেও আমি তার পাশে থাকব। সমাজের দায়িত্বশীল মানুষদের আহ্বান জানাচ্ছি, কেউ যদি প্রমার পাশে দাঁড়ায় তবে সে একদিন অনেক দূর যেতে পারবে।”
প্রমার মতো অদম্য মেধাবীদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। সহযোগিতা পেলে হয়তো একদিন গ্রামবাংলার এই মেয়ে মানুষের সেবায় দাঁড়াবে একজন চিকিৎসক হিসেবে।