তিন শ্রেণিতে ছয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক পাঁচজন: অচল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও বিদ্যালয়ের বাইরে ল্যাপটপ!

প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২৫

তিন শ্রেণিতে ছয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক পাঁচজন: অচল মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও বিদ্যালয়ের বাইরে ল্যাপটপ!

নিউজ ডেস্ক :

ঝালকাঠির রাজাপুরে সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রমের চরম দুরবস্থা। ৯৯ নং উত্তর পূর্ব ছোট কৈবর্তখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ছয়জন হলেও নিয়োজিত রয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক। অথচ ক্লাসরুম কার্যক্রমে নেই কোনো গতি, প্রযুক্তির ব্যবহার নেই, এমনকি সরকারপ্রদত্ত ল্যাপটপটিও স্কুলে নেই—ব্যবহার হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের বাসায়।

গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অধিকাংশ কক্ষ ফাঁকা। তৃতীয় শ্রেণির চারজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে, আর এক শ্রেণিকক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী গল্পে মশগুল—কোনো শিক্ষক নেই। আর প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় সেই দুপুর ২টা ১৫ মিনিটেও কোনো ছাত্র-ছাত্রীর নাম নেই। সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে শিক্ষকরা তড়িঘড়ি করে হাজিরা খাতায় নাম লেখা শুরু করেন।

বাস্তবে ৬, কাগজে ৫১ শিক্ষার্থী!

বিদ্যালয়ের খাতায় শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৫১ জন। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না। প্রধান শিক্ষক সাহিদা খানম এ বিষয়ে বলেন, “প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ জন আসে। আজ হয়তো হাজিরা খাতায় সবার নাম ওঠেনি।”

প্রধান শিক্ষকের ব্যাখ্যায় অসঙ্গতি থাকায় প্রশ্ন ওঠে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবহার নিয়েও। তিনি জানান, “মাল্টিমিডিয়ার সেটআপ দেওয়া হয়নি, তাই চালু করিনি। আর ল্যাপটপ ঈদের ছুটির পর স্কুলে আনি নাই, মূল্যায়ন পরীক্ষায় বাসায় ব্যবহার করছি।”

“সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ”

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, “সব শিক্ষকের মান-ইজ্জত আছে, দয়া করে সংবাদটি প্রকাশ না করেন।”

প্রশাসনের হস্তক্ষেপ

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আকতার হোসেন বলেন, “সরকারি ল্যাপটপ বিদ্যালয়ে রাখাই বাধ্যতামূলক। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি যথাযথভাবে নথিভুক্ত করতে হবে। তদন্ত করে প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হবে।”

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ্র বলেন, “সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

সারাদেশে এমন বাস্তবতা কি ব্যতিক্রম?

এ ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সারাদেশে আরও কত সরকারি বিদ্যালয়ে এমন লোকদেখানো শিক্ষা কার্যক্রম চলছে? কাগজে-কলমে সবকিছু ঠিক থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন হলে শিক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো কতটা কার্যকর—তা ভাবনার বিষয়।