তালগাছ কেটে পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৯, ২০২৫

তালগাছ কেটে পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা, এলাকাবাসীর ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝালকাঠির সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি তালগাছ কেটে শত শত বাবুই পাখির ছানা ও ডিম ধ্বংসের ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে সরকারি সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশাল তালগাছ কেটে ফেলেন স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। সেই গাছেই ছিল বাবুই পাখিদের শতাধিক বাসা ও প্রজননের নিরাপদ আশ্রয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোবারেক আলী ফকির নামের এক ব্যক্তি গাছটি মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। এরপরই গাছটি কেটে ফেলা হয়, ফলে প্রায় ৫০০টিরও বেশি বাবুই ছানা ও ডিম ধ্বংস হয়। গাছ কাটার এই ঘটনা শনিবার (২৮ জুন) জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তালগাছটি ছিল আশপাশের একমাত্র বাবুই পাখির আবাসস্থল এবং দীর্ঘদিন ধরে সেটি ‘প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এলাকার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, “এই কাজটি শুধু গাছ কাটা নয়, এটি প্রকৃতির বিরুদ্ধে এক নিষ্ঠুর অপরাধ।”

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ইউএনও ফারহানা ইয়াসমিন জানান, ঘটনার পরপরই বন বিভাগকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা। তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখির মধ্যে বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে দেশি বাবুই বিলুপ্তির মুখে। তাদের আবাস ধ্বংস করা মানেই একটি প্রজাতিকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, বাবুই পাখি মূলত গাছের পাতা ও তন্তু দিয়ে জটিল নকশার ঝুলন্ত বাসা তৈরি করে। তারা পরিবেশবান্ধব ও কৃষকের উপকারী বন্ধু হিসেবেই পরিচিত, কারণ তারা পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষা করে।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের ১ নম্বর তফসিল অনুযায়ী বাবুই একটি সংরক্ষিত পাখি। একে শিকার, হত্যা বা ক্ষতিগ্রস্ত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

সচেতন মহল দ্রুত ঘটনার তদন্ত, দোষীদের আইনের আওতায় আনা এবং পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।