কি ঘটেছিল মুরাদনগরে? নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সুমন

প্রকাশিত: ৪:২৩ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২৫

কি ঘটেছিল মুরাদনগরে? নেতৃত্বে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সুমন

নিউজ ডেস্ক:

সারাংশ:
কুমিল্লার মুরাদনগরের পাঁচকিত্তা গ্রামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ, পরে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

ঘটনার বিবরণ:

গত ২৬ জুন রাতে অভিযুক্ত ফজর আলী টাকা পাবে বলে ভুক্তভোগীর বাড়িতে যান। তখন বাড়িতে ভুক্তভোগীর মা-বাবা কেউ ছিলেন না। অভিযোগ রয়েছে, ফজর আলী জোর করে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু যুবক, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা সুমন, ঘটনাস্থলে গিয়ে গৃহবধূ ও ফজর আলীকে বিবস্ত্র অবস্থায় পেয়ে উভয়কে মারধর করেন এবং ভিডিও ধারণ করে। শনিবার রাত থেকে সেই ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

গ্রেপ্তার ও অভিযোগ:

পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণ ও ভিডিও কাণ্ডে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন:

ধর্ষণের প্রধান অভিযুক্ত ফজর আলী

ভিডিও ধারণ ও মারধরে জড়িত ছাত্রলীগ নেতা সুমন, রমজান, আরিফ, ও অনিক।

গ্রেপ্তারকৃত সুমন রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও বহিষ্কৃত নেতা।

পটভূমি ও মতবিরোধ:

এই ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা, আর্থিক লেনদেন, এবং পারিবারিক পুরনো বিরোধ কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কেউ বলছেন, ফজর আলীর সঙ্গে গৃহবধূর সম্পর্ক ছিল, আবার কেউ বলছেন এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অপপ্রচার।

ভুক্তভোগীর ভাই বলেন, “আমার বোনকে বিবস্ত্র করে যারা মারধর করেছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। শাহ পরানের সঙ্গে ফজরের বিরোধ থেকেই পুরো ঘটনা ঘটেছে।”

প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ:

সনাতন সংগঠনের প্রতিবাদ: কুমিল্লায় সংখ্যালঘু ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন বক্তারা।

বিএনপির প্রতিবাদ: ধর্ষণ ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে বিএনপি কর্মী বলে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপি নেতারা।

তদন্তের অগ্রগতি:

পিবিআই, সিআইডি ও পুলিশের যৌথ তদন্তে ভিডিও ভাইরাল, ধর্ষণ এবং নেপথ্যের সম্পর্কের প্রকৃতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুরাদনগর থানার ওসি বলেন, “তদন্ত শেষে পরকীয়ার অভিযোগ সত্য কিনা তা স্পষ্ট হবে।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা:

বর্তমানে ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কেউ থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।”

শেষ কথা:
মুরাদনগরের এই ঘটনা শুধু একটি নির্যাতনের কাহিনি নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধ ও আইনশৃঙ্খলার চরম পরীক্ষার উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।