এখানেই ছিল আমাদের বাড়ি: নদীটা আবারও গিলে খেল আমাদের ভিটেমাটি, বাবার সারা জীবনের সম্পদ
অনলাইন ডেস্ক:
নোয়াখালীর হাতিয়ার তমরদ্দি বাজার ঘেঁষা এলাকা। একসময় এখানেই ছিল এমরান হোসেনের পৈত্রিক ভিটা। স্মৃতিতে গাঁথা সেই বাড়ির ঠিকানা এখন শুধুই অতীত। গত সপ্তাহেই মেঘনার ভয়াল ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদের বসতবাড়ি, শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই।
২০০৫ সালে নদীভাঙনের শঙ্কায় পিতার সিদ্ধান্তে পরিবারসহ স্থানান্তরিত হন হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের সদ্য জেগে ওঠা এক চরে। তখন সদ্য এইচএসসি পাস করা তরুণ এমরান নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে আশ্রয় নেন নতুন ঠিকানায়। স্বপ্ন ছিল, ছিল সংগ্রাম। নতুন জায়গায় গড়ে ওঠে ঘর, খামার, পুকুর আর চাষাবাদ।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস, আবারও মেঘনার গ্রাস। মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় সেই নতুন চরেরও শুরু হয় নদীভাঙন। গত বছর ভাঙন এসে থামে তাদের বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে। এবার আর দেরি করেননি। নদী গিলার আগেই পরিবার নিয়ে আরও একবার স্থানান্তর করেন তিনি।
তবু শেষ রক্ষা হয়নি। এই মাসেই ভেঙে গেছে সেই দ্বিতীয় বসতভিটাও। বাবার সারা জীবনের সঞ্চয়, ঘামে ভেজা শ্রমে গড়া ভিটেমাটি আর রইল না। সেই বাড়িতেই সদ্য শুরু হয়েছিল এমরানের নতুন জীবন, সদ্যজাত কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছিলেন তিনি।
এমরান বলেন, “ভিটা হারানো মানে শুধু জমি হারানো নয়। হারিয়ে গেছে শিকড়, স্মৃতি আর আত্মপরিচয়। কেবল আমরা না, এই চরের আরও শত শত পরিবার আজ মাথা গোঁজার নতুন জায়গা খুঁজছে। এটাই আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত ড্রেজিংয়ের কারণে দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে মেঘনার ভাঙন। বারবার ঠিকানা বদলানো মানুষগুলোর জীবনে নেই কোনো স্থায়িত্ব, নেই নিশ্চয়তা। রাষ্ট্রীয় সহায়তা বা পুনর্বাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এখনও দৃশ্যমান নয়।
চরের মানুষদের আজকের এই করুণ বাস্তবতা যেন শুধুই সংখ্যা নয়—একটি জাতির দায়, আমাদের সবার দায়।