ইমামতি না করেও সম্মাননা পেলেন ওলামা দল নেতা, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

প্রকাশিত: ৪:৪৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ৯, ২০২৫

ইমামতি না করেও সম্মাননা পেলেন ওলামা দল নেতা, ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা

নিউজ ডেস্ক :

নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার এক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠক হাফেজ মাওলানা জসিম উদ্দিনকে ‘জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম’ হিসেবে সম্মাননা প্রদান নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। জীবনে কোনো মসজিদে নিয়মিত ইমামতি না করেও এমন সম্মাননা পাওয়ায় জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও ইমাম সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২৯ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজিত এক জাতীয় সম্মেলনে জসিম উদ্দিনকে জেলার শ্রেষ্ঠ ইমাম হিসেবে ক্রেস্ট, সনদ এবং চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান।

তবে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে জানাজানি হতেই এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা দাবি করছেন, জসিম উদ্দিন কোনো মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন না। প্রকৃত ইমামদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী একজনকে এভাবে পুরস্কৃত করা ইমামতির মর্যাদাকে হেয় করার শামিল।

বারহাট্টা উপজেলার বিক্রমশ্রী জামে মসজিদের বর্তমান ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি ২০১৪ সাল থেকে এই মসজিদে ইমামতি করছি। অথচ ওই তালিকায় আমাকে বাদ দিয়ে জসিম উদ্দিনকে মসজিদের ইমাম দেখানো হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”

জানা গেছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলা থেকে ২০ জন করে মোট ২০০ জন ইমামের নাম জমা দেওয়া হয়। বারহাট্টা থেকে পাঠানো তালিকায় জসিম উদ্দিন নিজের নাম বিক্রমশ্রী জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে উল্লেখ করেন। যাচাই-বাছাই ছাড়াই জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

স্থানীয় আলেমরা বলছেন, জসিম উদ্দিন একজন রাজনৈতিক নেতা এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেয়ারটেকার হলেও কখনো ইমামতি করেননি। তার এমন পুরস্কার পাওয়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য অপমানজনক।

এ প্রসঙ্গে বারহাট্টা হাফিজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা আনেয়ার হোসেন বলেন, “আমি নিজে দীর্ঘ বছর ইমামতি করছি, প্রশিক্ষণও নিয়েছি। অথচ এমন একজনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যিনি কখনো ইমামতি করেননি। এটি বড় ধরনের অনিয়ম।”

তবে জসিম উদ্দিন দাবি করেন, “আমি অনেক বছর আগে সদর ও ফায়ার সার্ভিস মসজিদে ইমামতি করেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছি। আমার অতীত রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসেছি।”

জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যোগ দিয়েছি। ওই নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন আগের উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার, যিনি দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটি ও জেলা অফিসের সুপারিশেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল।”

এই ঘটনার পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাচাই প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা বলছেন, ইমাম নির্বাচনে সঠিক তথ্য যাচাই না করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের সম্মাননা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং প্রকৃত ইমামদের উৎসাহ নষ্ট হবে।