‘আমার সন্তানকে পাব কোথায়?’
গোপালগঞ্জে এনসিপি কর্মসূচিতে হামলায় নিহত ৪, আহত বহু
নিউজ ডেস্ক
“আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি। তাকে কেন মেরে ফেলা হলো? আমি আমার সন্তানকে কোথায় পাব?” – এমন হৃদয়বিদারক আহাজারি করছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার রমজান কাজীর বাবা কামরুল কাজী। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন রমজানসহ আরও তিনজন।
নিহতরা হলেন— কোটালীপাড়ার রমজান কাজী, গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের দীপ্ত সাহা, টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন তালুকদার।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিহত দীপ্ত সাহা দুপুরের খাবার খেয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন, তখন চৌরঙ্গী মোড়ে তাঁর পেটে গুলি লাগে। দীপ্তের কাকা সাংবাদিকদের বলেন, “ও তো কোনো রাজনীতি করত না, হঠাৎ গুলিতে ঝরে গেল।”
এনসিপির স্থানীয় নেতারা জানান, বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ ২০০-৩০০ জনের একটি দল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় মঞ্চ, ছিঁড়ে ফেলা হয় ব্যানার। সমাবেশ শেষে এনসিপি নেতারা গাড়িবহর নিয়ে সরে যাওয়ার সময় আবারও হামলার মুখে পড়েন।
পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তবে হামলাকারীরা পাল্টা ইট-পাটকেল ছুঁড়লে সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. জীবিতেষ বিশ্বাস জানান, এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অন্তত ৯ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের অস্ত্রোপচার চলছে। আহতদের মধ্যে সুমন বিশ্বাস (২৫) নামের এক গাড়িচালককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর পেট ও হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে গুলি লেগেছে।
গোটা ঘটনার পর শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত হামলার মূল পরিকল্পনাকারীদের পরিচয় বা গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বাবা-মা, ভাই-বোন ও স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।