‘আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব’? 

প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২৫

‘আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব’? 

নিউজ ডেস্ক :

ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় চাঁদার দাবিতে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যবসায়ী সোহাগের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার সকালে নিহতের মরদেহ ঢাকা থেকে বরগুনার নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকায় তার মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। নিহত সোহাগের মেয়ে সোহানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি, এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? বাবাকে যারা হত্যা করেছে, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।”

জীবনের গল্পে করুণ পরিণতি

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাত্র সাত মাস বয়সে বজ্রপাতে সোহাগ তার বাবাকে হারান। এরপর মা আলেয়া বেগম সন্তানদের নিয়ে জীবিকার তাগিদে বরগুনা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। বহু কষ্টে বড় হয়ে সোহাগ মিটফোর্ড এলাকায় ‘মেসার্স সোহানা মেটাল’ নামে একটি দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। স্ত্রী লাকি বেগম ও সন্তানদের নিয়ে জিঞ্জিরা কদমতলী কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন তিনি।

চাঁদার জ্বালায় প্রাণ গেল সোহাগের

নিহতের পরিবার অভিযোগ করে জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই সোহাগের দোকান থেকে প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছিল। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় দোকান বন্ধ করে দেয় অভিযুক্তরা। ৯ জুলাই বিকেলে সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে নেয়া হয়। চাঁদার জন্য আবারও চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু সোহাগ তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে আটকে রেখে নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং পাথর দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়।

সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম বলেন, “আমার ভাই ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। তারা ব্যবসাটাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় ভাইকে পাথর মেরে মেরে হত্যা করেছে।”

স্ত্রী লাকি বেগম বলেন, “তারা আমার স্বামীর ব্যবসা সহ্য করতে পারছিল না। বারবার হুমকি দিয়ে চাঁদা চাইতো। অবশেষে তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হলো।”

বিচারের দাবি

শোকে বিহ্বল পরিবার এখন একটাই কথা বলছে—এ হত্যার বিচার চাই। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, সোহাগ হত্যার পেছনে যারা আছে, তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।